Header Ads

Header ADS

ইসলামিক ইতিহাস

আমরা এমন ছিলাম
১.
মাদীনার বাজার৷
ইহুদীদের বনু কাইনুকা গোত্রের এক স্বর্ণের দোকানে এসেছে এক মুসলিম মেয়ে৷
দোকানের ইহুদী কর্মচারী মুসলিম মেয়েটিকে মুখের কাপড় খুলতে বললো৷ পর্দার বিধান লঙ্ঘিত হবে বিধায়, মুসলিম মেয়েটি তার মুখের কাপড় খুলতে রাজী হলো না৷
মেয়েটি যখন দোকানের একটি চেয়ারে বসলো, এদিকে তখন ঐ ইহুদী কর্মচারী মেয়েটির অগোচরে তার পোশাকে পেরেক মেরে চেয়ারের সাথে আটকে দিলো৷
ফলে উঠতে গিয়ে মুসলিম মেয়েটির জামা চিড়ে তার শরীর অনাবৃত হয়ে গেলো৷ মেয়েটি চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো; “ওয়া ইসলামা?” (ইসলাম কোথায়?)
মুসলিম মেয়েটির আর্তনাদ শুনে এক মুসলিম পথচারী এগিয়ে এলো৷ ঘটনা আঁচ করতে পেরে সে অন্য কারো আসার অপক্ষো করলো না৷ তার কাছে ছুরি ছিলো৷ ছুরিটা বের করে ওই ইহুদী বুকে বসিয়ে দিলো৷ এবং মেয়টির আর্তনাদের জবাবে বললো; ‘মুসলিমরা এখনো বেঁচে আছে৷ তারা নিজেদের বোনদের রক্ষা করতে জানে৷’
এটা দেখে বনু কাইনুকার অন্যান্য ইহুদীরা জড়ো হয়ে ওই ইহুদীর হত্যার প্রতিশোধ নিতে সেই মুসলিমকে হত্যা করে ফেললো৷
যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এই খবর পৌঁছলো৷ তিনি প্রশ্ন উঠাননি, ‘কেন লোকটা ওই ইহুদীকে হত্যা করতে গেলো?’ বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বনু কাইনুকাকে অবরোধ করলেন৷ ১৫ দিন পর তারা আত্মসমর্পণ করলো৷ এরপর বনু কাইনুকা গোত্রের সকল ইহুদীকে মাদীনা থেকে বের করে দেয়া হলো৷
২.
আব্বাসি খিলাফাহর সময়কাল৷
আব্বাসি খলীফা মু’তাসিম বিল্লাহ মসনদে বসে আছেন৷ মাত্রই পানি পান করার জন্যে গ্লাস হাতে নিয়েছেন৷
এমন সময়ে একজন ছুটে এল দরবারে৷
হে আমীরুল মু’মিনীন! সীমান্তে রোমানরা আক্রমণ করেছে৷ তরপর… ৷ ঘটনা মন দিয়ে শুনছিলেন খলীফা৷
বর্ণনার একপর্যায়ে লোকটি বল, আমি দুর থেকে শুনেছি এক হাশেমি বন্দী নারী আর্তনাদ করে বলছিল; “খলীফা মুতাসিম বিল্লাহ! তুমি কোথায়?”
এটা শুনেই খলীফা পানির গ্লাস ছুড়ে ফেলে দিয়ে বললেন; “লাব্বাইক৷” (আমি হাজির৷)
খোদ খলীফা নিজে দ্রুতগতিতে ছুটলেন সীমান্তের দিকে৷ কাউকে কিছু বলতে হল না, পেছনে ছুটল হাজার হাজার সৈন্য৷ কিন্তু ততক্ষণে বন্দীদের নিয়ে রোমানরা তাদের দুর্গে চলে গেছে৷
একমুহুর্তও বিলম্ব করলেন না খলীফা৷ একই গতিতে সীমানা পেরিয়ে সরাসরি হামলা করে বসলেন রোমানদের উপর৷ তাদের সবচেয়ে শক্তিশালী দুর্গ ‘আমুরিয়া’ দখল করে, সকল বন্দীদের উদ্ধার করে নিজ এলাকায় ফিরে এলেন৷
৩.
করাচীর চিঠি৷
করাচী, যার পূর্ব নাম দেবল৷ সেখান থেকে একটি চিঠি এসেছে গভর্ণর হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কাছে৷
দেবলের লুটেরা রাজা দাহির এক মুসলিম বণিক কাফেলাকে আটক করেছে৷ সেখান থেকে এক বন্দী মেয়ে চিঠিটি পাঠিয়েছে৷
মেয়েটি চিঠিতে লিখেছেঃ “মুসলমানদের তলোয়ার যদি ভোতা না হয়ে থাকে, তারা যেন আমাদের ডাকে সাড়া দেয়৷”
অসহায় মেয়েটির চিঠিটা পড়েই, দাড়িয়ে যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন হাজ্জাজ বিন ইউসুফ৷
নিজের জামাতা ও ভাইয়ের ছেলে মুহাম্মদ বিন কাসিমকে নির্দেশ করলেন, যত দ্রুত সম্ভব সিন্ধু জয় করতে৷
শুুরু হল ১৭ বছর বয়সী মুহাম্মাদ বিন কাসিমের, অত্যাচারী লোটেরা রাজা দাহিরের কবল থেকে এক মুসলিম বোনকে মুক্ত করার জন্য হিন্দুস্তান অভিযান৷
৪.
আন্দালুসি স্পেন৷
স্পেনের জালিম সম্রাট রডরিক তার আঞ্চলিক গভর্ণর কাউন্ট জুলিয়ানের মেয়ে ফ্লোরিডার সম্ভ্রমহানি করেছে৷
কন্যার এমন অবস্থা সহ্য করা যেকোন পিতার পক্ষেই কঠিন৷ কাউন্ট জুলিয়ানের কাছেও এই অত্যচার সহ্য করার মত ছিল না৷
সম্রাটারে হাতে সম্ভ্রমহানি! বিচারক যেখানে নিজেই বিচারের উপযুক্ত, সেখানে ন্যায়বিচারের আশা রাখাটা, কেমন যেন মরিচিকার পানি দিয়ে পিপাসা নিবারণ করা৷
এমন কারো প্রয়োজন, যার ন্যায়বিচারের কাছে ‘রাজা-প্রজা’ সবাই সমান৷
কাউন্ট জুলিয়ান জানতেন, তার সময়ে এরকম ন্যায়বিচারক হিসেবে খ্যাত একজনই আছেন৷ আফ্রিকার গভর্ণর মুসা বিন নুসাইর৷ একজন মুসলিম! অগত্যা তিনি মুসার কাছেই যাবার সিদ্ধান্ত নিলেন৷
জুলিয়ান এসেছেন মুসার কাছে৷ ভিন্ন ভাবে বললে, একজন খৃষ্টান এসেছে একজন মুসলিমের কাছে! ন্যায়বিচারের জন্য৷
এক অসহায় পিতার মুখে কন্যার সম্ভ্রমহানির কথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলেন মুসা৷ হোক সে মুসলিম কিবা অমুসলিম৷ সম্ভ্রমের মূল্য সবার জন্য সমান৷ জুলিয়ানের কথা শেষ হবার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন তিনি৷
নিজের বিশ্বস্ত সেনাপতি তারিক বিন যিয়াদকে জরুরী তলব করে নির্দেশ দিলেন, চরিত্রহীন লম্পট রডরিককে হটিয়ে সমগ্র স্পেন জয় করতে৷ ন্যায়বিচারের ঝান্ডাতলে স্পেনকেও নিয়ে আসতে৷
কাউন্ট জুলিয়ান অবাক হয়ে দেখতে থাকলেন, এক খৃষ্টান মেয়ের সম্ভ্রমের মূল্য আদায় করার জন্য, স্পেন জয়ের উদ্দেশ্যে রাওনা হয়ে গেল তারিক বিন যিয়াদের বাহিনী৷ মুসলিম বাহিনী!
৫.
নিস্তব্দ রাত৷
চোখে ঘুম নেই৷
স্পেনের শাসক মনসুর আল-হাজিব এপাশ ওপাশ করছেন৷ দু'চোখে ঘুম নেই। চোখের পাতা এক করতে পারছেন না৷
কারণ তিনি খবর পেয়েছেন, তার সীমান্তের বাইরে একটি গীর্জায় এক মুসলিম নারী বন্দী অবস্থায় আছে৷
একজন মুসলিম নারী গীর্জায় বন্দীত্ব জীবন কাটাবে আর তিনি ঘুমুবেন?! দু'চোখের পাতা এক করবেন!?
সীমানার ওপারে বলে তিনি বেশ চিন্তিত৷ নিজ সীমান্তে হলে মুহূর্তেই যা করার করে ফেলতেন৷
শেষে একটি মেয়ের জন্যই যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন৷ চোখের ঘুম ফিরিয়ে আনতে তিনি ছুটলেন গীর্জার সেই মুসলিম বন্দিনীকে মুক্ত করতে৷ সমস্ত শক্তি নিয়ে হঠাৎ-ই আক্রমণ করে বসলেন৷
৬.
আবুগারীবের চিঠি৷
ইরাকের এক মার্কিন কারাগার৷ নাম আবুগারীব৷ এখানে ইরাকের নারীদের বন্দী করে, অপাশবিক নির্যাতন করা হয়৷
বন্দিনীদের নির্যাতনের পরিমান এতটাই যে, কাউকে আত্মহত্যার সুযোগ পর্যন্তও রাখা হয় না৷ বন্দিনীদের গায়ে কোনও পোশাক কেড়ে নেয়া হয়৷ কোনও কোনও বন্দিনীকে একেক দিনে দশবারের উপর ধর্ষন করা হয়!
বন্দিনীদের একজন কোনও এক ভাবে একটা চিঠি লিখে পাঠালো ইরাকী মুজাহিদদের কাছে৷
চিঠির মূল বক্তব্য— “(যুলুম নির্যাতনের বর্ণনার পর) আমরা আমাদের ভাইদের আহ্বান করছি, যারা আমাদের মত এক আল্লাহতে বিশ্বাস রাখে৷ তারা যাতে আমাদের সহ এই কারাগার ধ্বসিয়ে দিয়ে আমাদের মুক্ত করে৷ আমরা আমাদের গর্ভে বড় হতে থাকা, মার্কিনিদের অবৈধ সন্তানের মা হতে চাই না৷”
চিঠিটা প্রাপকদের নিকট পৌঁছার ক'দিন পর আবুগারীব কারাগারে ইরাকী মুজাহিদদের পক্ষ হতে প্রচন্ড আক্রমন হয়৷ ইতিপূর্বে কখনো এরকম আক্রমন করা হয় নি৷ আক্রমনে ‘কারাগার ও কারাগারে সব’ ধ্বংস্তুপে পরিণত হয়৷ বন্দিনীদের কাউকে উদ্ধার করা সম্ভব হয় নি৷
পরে ইরাকী মুজাহাদিদের পক্ষ হতে সেই বন্দিনীর চিঠিটা তাদের এক ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে তার জবাবে লিখা হলো— “প্রিয় বোন! আমাদের ক্ষমা করো৷ আমরা এখনও তোমাদের সেই প্রকৃত ভাই হতে পারি নি৷ দু'আ করো আমরা যেন সেরকম হতে পারি৷”
০.
ফিলিস্তিন, আরাকান, কাশ্মীর সহ জানা অজানা আরো অন্যান্য দেশে আজকে আমাদের কত মা-বোন কাফিরদের হাতে বন্দী-লাঞ্চিত, সেই প্রশ্ন এখানে করা হচ্ছে না৷
প্রশ্ন হচ্ছে, খোদ আমাদের হাত থেকে আমাদের মা-বোনরা ঠিক কতটা নিরাপদ?!

No comments

Powered by Blogger.